Feature Label 3

0

কমরেড আসাদ্দর আলী স্মৃতি পরিষদ,কমরেড আসাদ্দর আলী পরিষদ,কমরেড আসাদ্দর আলী,আসাদ্দর আলী,কমরেড আসদ্দর আলী,আসদ্দর আলী,কমরেড আছদ্দর আলী,আছদ্দর আলী, ভীষ্মদেব চৌধুরী,কমরেড,comrade asaddar ali,asaddar ali,comrade assador ali,comrade,assador ali,



 পোশাক-পরিচ্ছেদ এবং আচরণে-উচ্চারণে শতভাগ সিলেটি অথচ মননে-বিশ্বাসে আন্তর্জাতিক আসাদ্দর আলী আজো আমার কাছে এক বিস্ময়কর মানুষ। তাঁর কোনো কবিতা আমি কখনো পড়িনি অথচ আশৈশব তাঁকে ‘কবি ভাই’ বলে অবলীলায় সম্বোধন করেছি। তাঁর বয়স সম্পর্কেও আমার ধারনা স্পষ্ট ছিল না। বিগত শতকের ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে, সম্ভবত ১৯৬৭ কিংবা ১৯৬৮ সনে তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে আমার। তখন তিনি সুঠাম স্বাস্থ্যেও অধিকারী এক পৌঢ় রাজনীতিক আর আমি নয়/দশ বছরের এক অতুৎসাহী বালক। ওই সময় তিনি আত্মগোপনে নাকি প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা আমার বোধসীমার অন্তর্গত ছিল না। রাজনীতির অন্ধি-সন্ধি সম্পর্কে আমার ধারনাও ছিল তখন অস্পর্ষ্ট। তবু কমরেড আসাদ্দর আলী তাঁর নিজের গুনেই সেদিন আমার মতো এক সাধারণ কিশোরের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন। তাঁর মৃত্যু-উত্তর ষোলো বৎসর অতিক্রান্ত হয়েছে, আজ দীর্ঘ সময়-ব্যবধানে, তাঁকে স্মরণ-পরিধির কেন্দ্রে স্থাপন কওে যখন নতুন কওে বুঝবার চেষ্টা করছি, তখন তাঁর ভেতরকার ¯েœহপ্রবন সত্তাটুকুই আমার কাছে বড়ো হয়ে উঠেছে ক্রমশ। তাঁর স্মৃতিশক্তির গাঁথুনিটি ছিল সুকঠিন, আমার মতো এক কিশোরের নামটি উত্তরকালে তিনি বিস্মৃত হননি কখনো। তাঁর মস্তিস্ককোষে সঞ্চিত ছিল এক বিপুল  তথ্যভান্ডার বিভিন্ন সময় ব্যবধানে তাঁর সঙ্গে যখনই আমার সাক্ষাৎ হয়েছে, লক্ষ করেছি, আমার সম্পর্কে সর্বসাম্প্রতিক তথ্যটুকু তাঁর অজানা নয়। আমি তাঁর রাজনীতির অনুসারী ছিলাম না। উত্তরকালে রাজনীতির সঙ্গে আমার যেটুকু সম্পৃক্তি ঘটেছিল, তাঁর আরব্ধ রাজনীতির কৌশলের সঙ্গে তার ব্যবধান ছিল বিস্তর। তবু তিনি কোনো কিংবা কোনো প্রক্রিয়ায় আমার কিংবা আমার মতো অনেকের বিষয়ে অবহিত থাকতেন, গুরুত্ব ও সম্মানের সঙ্গে বায়োঃকনিষ্ঠের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতেন, বিষ্মিত হয়ে তা ভেবেছি। সিলেট শহরের সামাজিক জীবনে ‘ তুই’ সম্বোধনের নৈকট্য আর আন্তরিকতা ক্রমবিস্তৃত নাগরিক জটিলতার আড়ম্বরে হারিয়ে গেছে প্রায়। সিলেট শহরের সম্প্রীতিমন্ডিত সেই আদি সংস্কৃতিকে ধারণ করে রেখেছিলেন ‘কবি ভাই’। সেই যে প্রথম দিন ‘তুই’ বলে সম্বোধণ করেছিলেন, সময়ের ব্যবধান সম্পর্কেও ওই মৌলকেন্দ্র থেকে তাঁকে টলাতে পারেনি। উত্তরকালে যখনই দেখা হয়েছে, রাজপথে, ধোপাদিঘির উত্তর-পূর্ব কোণের বাসা কিংবা ট্রেনে, সেই আদি ও অকৃত্রিম সম্বোধনে তিনি কাছে টেনে নিয়েছেন। এই পারস্পর্য, অকপট কিংবা অবিকল থাকার সামর্থ্য তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তারই এক স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি।
দুই. সুরমা নদীর তীরঘেঁষা তোপখানায় যে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে আমার শৈশব-কৈশোর অতিক্রান্ত হয়েছে, রাজনীতির দূরাগত পরোক্ষ উত্তাপ তাকে কখনো সচকিত কিংবা কৌতূহলি করে তুলেছে। ষাটের দশকের ওই উত্তাল সময় পর্বে পাক্-ভারত যুদ্ধের ব্ল্যাকআউট বিভীষিকা, লণ্ঠন আর গোলাপ ফুলের নির্বাচনী দ্বৈরথ, সিলেটে লৌহ মানব ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের আগমন উপলক্ষে ব্যাপক উৎকন্ঠা, বিশেষত প্রেসিডেন্ট-এর সার্কিট হাউজে যাত্রাপথে প্রগতিশীল ছাত্র সমাজের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় একটিভিস্ট কর্মীর প্রতিবাদ-বিদ্রোহ, নবম-দশম শ্রেণীর সংস্কৃতি-বিষয়ক বইকে কেন্দ্র করে ৬৯ সনে ক্রম-বিন্তুত ছাত্র-গণ-আন্দোলন, সামরিক শাসন এবং সার্বজনীন নির্বাচন-ষাটের দশকের এইসব আপাত বিচ্ছিন্ন অথচ পরস্পর সংলগ্ন ঘটনাপুঞ্জ বিচিত্রভাবে আমার শৈশব-কৈশোর চেতনাকে প্রভাবিত করেছে।
তোপখানায় আমার ভাড়াকরা বাসায় পৌঁছাতে যে বাসাবাড়িটি প্রথমেই অতিক্রম করতে হতো, সে বাড়ির বড়ো ছেলে কৃতি ছাত্র অচিন্ত্য সেন তখন তুখোড় ছাত্রনেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তখন তিনি। যে সময়পর্বের কথা লিখছি, সে সময়ে বিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র মাত্রেরই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ ছিল পদার্থ বিজ্ঞান, অনুরূপভাবে মানবিক বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থীরা ইতিহাস/অর্থনীতির মধ্যেই নিজেদের পছন্দ সীমাবদ্ধ রাখতেন। শুনেছি এডভোকেট পিতা অমরনাথ সেন এর ইচ্ছাতেই প্রথম পছন্দ অর্থনীতির বদলে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছিলেন অচিন্ত্য সেন। অনেকেই জানেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনার্স পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার অনুমতি শেষ পর্যন্ত তঁাঁকে দেননি। অবশেষে সম্ভবত ১৯৬৯ সনে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের স্নাতক পাস পরীক্ষায় নরসিংদী কেন্দ্র থেকে গোপনে অবতীর্ণ হয়ে তিনি প্রথম শ্রেণী অর্জন করে এক বিরল রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। এই অচিন্ত্য সেন, অনেকের অচিন্ত্যদা, কিন্তু আমরা যারা পারিবারিক পরিমন্ডলের মানুষ, তাদের ‘সন্টুদা’, ছুটি-ছাটায় সিলেট এলেই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর আড্ডায় সরগরম হয়ে উঠত তাঁদের বাসা। মনে আছে ঊনসত্তরের উত্তাল সময়পর্বেই তাঁর বাসায় অসীম কৌতূহল আর বিষ্ময় নিয়ে কিংবদন্তির ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন আর দিলীপ বড়–য়াকে প্রত্যক্ষ করেছিলাম। পরের বছরেই অচিন্ত্য সেন পরিণয়ব্ধ হয়েছিলেন ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেত্রী দীপা দত্তের সঙ্গে । রাজনীতি জীবনের অধিকাংশ সময়ই যিনি অজ্ঞাত অবস্থানে কাটিয়েছেন, চট্টগ্রামের সেই কিংবদন্তির রাজনীতিক সুধাংশবিমল দত্তের কণ্যা এই দীপা। এ-সব আপাত বিচ্ছিন্ন কথা এখানে উপস্থাপন করছি এই কারণে যে, তোপখানায় সন্টুদার বাসাতেই আমি প্রথম দেখেছিলাম কমরেড আসাদ্দর আলীকে। আগেই উল্লেখ করেছি ওই অসাধারণ মেধাবী ছাত্রনেতার বাড়িতে নেতা-কর্মীরা প্রায়ই বেড়াতে আসতেন। ওই বাসাতেই আমি দেখেছি রুটি-শ্রমিক সমিতির নেতা আশিক চৌধুরী, ছাত্রনেতা গুলজার আহমদ, আবু হেনা চৌধুরী প্রমুখ ওই কালের এক বিশেষ ধারার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে।
কবি ভাই আসাদ্দর আলীর সঙ্গে ওই প্রথম পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁর বাসায়ও গিয়েছি কয়েকবার। যতদূর মনে পড়ে তখন তিনি থাকতেন সোবহানিঘাট তেমাথার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষা ছোট্ট গলি এক বাসায়। আমার মামাতো ভাই কবি পার্থ সারথি চৌধুরী হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে এলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আমার অকালপ্রয়াত মধ্যম অগ্রজ ছড়াকার-সাংবাদিক বুদ্ধদেব চৌধুরীও তখন ছাত্র রাজনীতির সূত্রে কবি ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়ে উঠছিলেন। ওই দুই দাদার সঙ্গে আমি তাঁর বাসায় গিয়েছি কয়েকবার।
সিলেটের রাজনীতি জগতের তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেখেছি যাঁরা লুঙ্গি পরিধান করে নিজেদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পরিচালনা করেছেন। জননেতা পীর হবিবুর রহমান, জননেতা আবদুল হামিদ এবং কমরেড আসদ্দর আলী এই তিন বিশিষ্ট ব্যক্তি। মৌলানা আবদুল হামিদ এবং কমরেড আসাদ্দর আলী এই তিন বিশিষ্ট ব্যক্তি। মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং মৌলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশই সম্ভবত রাজনীতির দুনিয়ায় লুঙ্গিকে জাতে তুলেছিলেন। রাজনীতির বাইরের মানুষ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক কবি বেলাল মোহাম্মদ লুঙ্গি পরে উচ্চপদের চাকুরী জীবন পূর্ণ করেছেন। চাকুরি জীবনের একটি বড়ো সময় তিনি কাটিয়েছেন সিলেটে। ইদানিং সৈয়দ আবুল মকসুদকে মহাত্মা গান্ধীর অনুসরণে সেলাই বর্জিত বস্ত্রখন্ড পরিধানের দৃষ্টান্ত ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। যে তিনজন রাজনীতিকের কথা উল্লেখ করলাম, লোভ-প্রলোভনের-ক্ষমতা উপেক্ষা করে জনকল্যাণে নিবেদিত ত্যাগী অনাড়ম্বর জীবন ছিল তাঁদের রাজনৈতিক বিশ্বাসেরই ধাঁচে তৈরি।
তিন.
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সর্বশেষ যখন কবি ভাইকে দেখেছি তখনো তিনি সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী। প্রশস্ত বক্ষ, আটসাট শরীরের সঙ্গে মানানসই বৃহৎ মস্তক, সামনের দিকের অর্ধ-বৃত্তাকার টাক আর স্নেহবর্ষী দৃষ্টিপাত মিলিয়ে সম্পূর্ণ আসাদ্দর আলী ছিলেন এক ভিন্ন মাপের মানুষ। তিনি উপান্তে নিজের যোগ্যতা বলেই তাঁর রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্তরে পৌঁছেছিলেন। ১৯৪২ সনে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন কবি ভাই। ১৯৪৯ সনে চব্বিশ বছর বয়সে লাভ করেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যপদ। বিভক্ত পার্টির মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক গণশক্তি’র সম্পাদক হয়েছিলেন দীর্ঘকাল। শেষ জীবনে সাম্যবাদী দলের সম্পাদক ও সভাপতি বৃত হয়েছিলেন তিনি। তিন থেকে তেরোমাস মেয়াদে পাঁচবার কারাবাস করেছেন। পার্টি নিষিদ্ধ থাকাকালে আত্মগোপন করে কাটিয়েছেন বহু বছর। কিন্তু বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তার জীবন-যাপন, অশন-ব্যসন, চলন-বাচন ছিল সাদামাঠা, পলিমাটির গন্ধমেশা। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় অনর্গল কথা বলতেন অনুমান করি রাজনৈতিক বক্তৃতাও হয়তো করতেন আঞ্চলিক ভাষাতেই।
১৯৭৬-৮২ সময় পর্বে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ছুটিছাটায় সিলেটে আসার সময়ে তাঁর সঙ্গে ট্রেন পথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে কয়েকবার। ডেকে নিয়ে সুলভ শ্রেণীর আসনে বসিয়েছেন। কখনো হাতে গুঁজে দিয়েছেন নিজের পড়ার জন্য আনা ‘সাপ্তাহিক গণশক্তির’র কপি।
কবি ভাইয়ের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে আমার কেনো ধারণা ছিল না। আমি নিশ্চিতভাবে মনে করেছিলাম কবি ভাই একক নিঃসঙ্গ মানুষ। তাঁর আহ্বানে না কি অন্য কারো সঙ্গী হয়ে তাঁর ধোপাদীঘির উত্তর-পূর্ব পরের বাসায় গিয়েছিলাম ৭৯ কিংবা ৮০ সনের এক সকালে। সেদিনই প্রথম জেনেছিলাম এবং দেখেছিলাম এক সাংসরিক পরিমন্ডল তিনি রচনা করেছেন। আমার তরুণ বয়সের অভিজ্ঞতায় ওই স্মৃতিটুকু সলাজ বিষ্ময়ে পূর্ণ হয়ে আছে। সর্বত্যাগী অকৃতদার অনেক রাজনৈতিক নেতার অসহায় শেষ জীবনের দৃষ্টান্তে আমাদের বামপন্থী রাজনৈতিক ঐতিহ্যপূর্ণ সর্বত্যাগী কবি ভাইয়ের শেষ জীবনটুকু অন্তত নৈঃসঙ্গের ভারে বিপর্যস্ত হয়নি, আজ এই কথা অনুমান করে শান্তি পাই।

ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী : ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের বাংলা অধ্যাপক।

Post a Comment

কমরেড আসাদ্দর আলী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম।তিনি সারাজীবন মেহনতী মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবিস্মরণীয় অবদান ছিল।তিনি কমিনিষ্ট আন্দোলনের পথিকৃত এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।গণ মানুষের নেতা কমরেড আসাদ্দর আলীর স্বরনে একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র।সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।