Feature Label 3

0

কমরেড আসাদ্দর আলী স্মৃতি পরিষদ,কমরেড আসাদ্দর আলী, ভাষা আন্দোলন সিলেট,৫২ ভাষা আন্দোলন,
সিলেটে ভাষা আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৮ সালের আগেই। ১৯৫২ সালের মার্চ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে সিলেট ছিল অগ্রণী। ঢাকার বাইরে সিলেটের জনজীবনেই ভাষা আন্দোলণ’৫২-এর আগে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, মাসিক আল ইসলাহ, সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকা বাংলা ভাষার পক্ষে সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করে। সিলেটে মহিলারাও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষার পক্ষে প্রথম জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় সিলেটে।
১৯৪৭ সালের ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত আসরের মূল বিষয় ছিল রাষ্ট্রভাষা।সেখানে শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক মুসলিম চৌধুরী ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন।
এছাড়া, ৩০ নভেম্বর সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা হলে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু হওয়া উচিত’ এ বিষয়ে।
১৯৪৭ সালে ঢাকার বাইরে এসব তৎপরতা ছিল নজিরবিহীন। বাংলা ভাষার পক্ষে এটিকে দেশের প্রথম সমাবেশরূপে অভিহিত করা যায়। বাংলা ভাষা সম্পর্কে যখন অনেক লেখক-বৃদ্ধিজীবি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন তখন মফস্বল শহর সিলেট থেকে সাহসী এসব পদক্ষেপ ছিল নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৪৮ সালে সাপ্তাহিক নওবেলাল যখন বাংলার পক্ষে সাহসী ও জোরালো আওয়াজ তুলে, তখন ঢাকা থেকে কোনো দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। ভাষা আন্দোলনে দীর্ঘ পথ পরিক্রমা অসংখ্য কবি-সাহিত্যিক মরমীর জন্মভূমি, হযরত শাহজালাল (রহ.) তিনশ’ ষাট আউলিয়র কর্মভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট গ্রহণ করে অগ্রণী ভূমিকা।
ভাষা আন্দোলন শুধু সিলেটেই নয়, সিলেটি অনেকেই ঢাকায় ভাষা আন্দোলনে উজ্জ্বল অবদান রেখেছেন। রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিভিত্তিক উভয় ময়দানে ঢাকাবাসী সিলেটীদের উপস্থিতি ছিল সামনের কাতারে।
১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাংস্কৃতিক সংগঠন পাকিস্ত—ান তমদ্দুন মজলিস ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু ? নামে একটি সাময়িকী প্রকাশ করে। এ সংগঠনের মূখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক বের হয় ১৯৪৮-এর শেষ দিকে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বহুল আলোচিত এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কথাসাহিত্যিক সিলেটের শাহেদ আলী। তিনি ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
এছাড়,া যারা ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, কারাভোগ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ (বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা), কথাশিল্পী সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়া (সাবেক অর্থমন্ত্রী) মরহুম এম. সাইফুর রহমান (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী) জাকারিয়া খান চৌধুরী, কুলাউড়ার রওশন আরা বাচ্চু, আহমদ কবির চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ড. আখলাকুর রহমান, এসএম আলী, (ডেইলী স্টারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক), মাহবুবুল বারী, মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী, সদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী (শাবির প্রথম ভিসি), আবুল মাল আব্দুল মুহিত (অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামালীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য), মোঃ ইলিয়াসুর রহমান প্রমুখ।
ভাষা আন্দোলনে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আজীবন সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হক সম্পাদিত আল ইসলাহ এবং রাজনীতিবিদ মাহমুদ আলী পরিচালনাধীন ও দেওয়ান মুহম্মদ আজরফ সম্পাদিত সাপ্তাহিক নওবেলালের অগ্রণী ভূমিকা রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
১৯৪৭ সালের ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত আসরের মূল বিষয় ছিল রাষ্ট্রভাষা। সেখানে শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক মুসলিম চৌধুরী ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা শীর্ষক ওই প্রবন্ধে বিরুদ্ধবাদীদের সম্ভাব্য যুক্তি নাকচ করে দিয়ে তিনি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার পক্ষে জোরালো মত ব্যক্ত করেন।
এছাড়া, ৩০ নভেম্বর সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা হলে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু হওয়া উচিত’ এ বিষয়ে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত রস সাহিত্যিক-অনবাদক মতিন উদ্দীন আহমদ। প্রবন্ধ পাঠ করেন হোসেন আহমদ। প্রধান বক্তা ছিলেন ভাষাবিদ ড. সৈয়দ মোস্তফা আলী।
ঐতিহাসিক এ সমাবেশ সম্পর্কে শহরে রটে যায় যে, ওইদিন বাংলা বনাম উর্দু বিতর্ক হতে যাচ্ছে। তাই লোক সমাগম হয় অপ্রত্যাশিত। বিরোধীরা আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে আসে মাদ্রাসা হলে। তাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জন্য অধিবেশনটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়নি।
তারপরও ৮ ডিসেম্বর আরেকটি সভা হয় শিক্ষাবিদ নজমুল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে। এতে প্রবন্ধ পাঠ করেন মরহুম জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ।
১৯৪৭ সালে ঢাকার বাইরে এসব তৎপরতা ছিল নজিরবিহীন। বাংলা ভাষার পক্ষে এটিকে দেশের প্রথম সমাবেশরূপে অভিহিত করা যায়। বাংলা ভাষা সম্পর্কে যখন অনেক লেখক-বৃদ্ধিজীবি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন তখন মফস্বল শহর সিলেট থেকে সাহসী এসব পদক্ষেপ ছিল নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৪৮ সালের প্রথম দিকেই বাংলা ভাষার বিতর্কটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১১ জানুয়ারী পাকিস্তান সরকারের যানবাহন ও যোগযোগমন্ত্রী আব্দুর রব নিশতার সিলেটে সফরে আসে। এ সুযোগে সিলেট মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের আবদুস সামাদের নেতৃত্বে এবং মহিলা মুসলিম লীগের জেলা শাখার সভানেত্রী জোবেদা খাতুন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মহিলা প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা দাবী জানান। এর পরপরই বাংলার বিপক্ষে এবং উর্দুর পক্ষে শহরে একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়।
তমদ্দুন মজলিস এবং সিলেট জেলা ছাত্র ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘৪৮ সালের ৮ মার্চ স্থানীয় গোবিন্দ পার্কে (বর্তমানে হাসান মার্কেট) এক জনসভা আহ্বান করা হয়। এতে সভাপতি ছিলেন মাহমুদ আলী (পাকিস্তানে বসবাসরত)। সভা শুরুর কিছুক্ষনের মধ্যে বাংলা বিরোধী পক্ষ লাটি নিয়ে হামলা চালিয়ে সভাপতির চেয়ার দখল করে নেয়। এতে মাহমুদ আলী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, তমুদ্দিন মজলিসের সম্পাদক আব্দুস সামাদ, মকসুদ আহমদ ইটপাটকেলের শিকার হন। ফলে সভাটি পন্ডু হয়ে যায়।
এর প্রতিবাদে ১০ মার্চ গোবিন্দ পার্কে সভা আহ্বান করলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট দু মাসের জন্য ভাষা সম্পর্কিত সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে দেন। এ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জনসভার পক্ষে জনমত প্রবল দেখে ডেপুটি কমিশনার এম মুর্শেদকে দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করানো হয়। বিষয়টি শুধু জেলা পর্যায়ে নয়-পাকিস্তানের সরকারের উর্ধ্বতন হলেও চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল।
উর্দু সমর্থকরা বাংলা সমর্থকদের কোনঠাসা করার জন্য ‘ওরা পাকিস্তানের দশমন, সদ্য স্বাধীন দেশে ওরা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে শিশু রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চায়’ এ ধরনের প্রচারণার জবাবে ১৮জন বিশিষ্ট নাগরিক একটি বিবৃতিতে দেন। এই বিবৃতিটি তৈরীর উদ্যোক্তা ছিলেন ১৯৪৭ সালে গঠিত রেফারেন্ডাম বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এডভোকেট। এদিকে, যুক্তি এবং শক্তি উর্দুর পক্ষে যতই থাক, বিপক্ষ শক্তি ধীরে ধীরে প্রবল হয়ে ওঠে। বাংলার পক্ষে জনমত গড়ে উঠতে থাকে।
শহরের জিন্দাবাজারে সাপ্তাহিক নওবেলাল অফিস বাংলা ভাষার পক্ষের কর্মীদের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হত। ভাষা সৈনিক মরহুম সা’দত খানের স্মৃতি অনুযায়ী এ পর্যায়ে সংগঠক হিসেবে তরুণদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত পীর হবিবুর রহমান, কমরেড আসাদ্দর আলী, সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন শাহজালাল দরগাহ’র মোতাওয়াল্লী এজেড আব্দুল্লাহ, সাবেক মন্ত্রী গোলাপগঞ্জের নুরুর রহমান, হাজেরা মাহমুদ, ব্যবসায়ী আব্দুর রহীম, মতচ্ছির আলী, মুুনির উদ্দিন, সৈয়দ মোতাহির আলী, কদমতলীর আব্দুল হামিদ, ছাত্রদের মধ্যে আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সৈয়দ সুহরাব বখত, উবেদ জায়গীরদার, নজির উদ্দিন আহমদ, সোনাহর আলী, ইসহাক মিয়া, সৈয়দ আকমল হোসেন, আব্দুল মজিদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী, কমরেড তারা মিয়া, সফাত আহমদ চৌধুরী, মুহিবুর রহমান (ছন্দু মিয়া), কবির চৌধুরী, বরুণ রায়, অনিমেশ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।
ভাষা আন্দোলনে মহিলাদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন- মহিলা মসলিমলীগ জেলা শাখার সভানেত্রী গোলাপগঞ্জের ঢাকা-দক্ষিণ শীলঘাটের খান বাহাদুর শরাফত আলীর কন্যা জোবেদা খানম চৌধুরী, সহ-সভানেত্রী সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী, সৈয়দ মুজতবা আলীর বোন সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মাহমুদ আলীর সহধর্মিনী হাজেরা মাহমুদ, রাবেয়া খাতুন আলী।
এছাড়া সৈয়দা লুৎফুন্নেছা, শরিফুন্নেছা খান চৌধুরী, সামসি খানম চৌধুরী, জাহানারা মতিন, রোকেয়া বেগম, নূরজাহান বেগম, সৈয়দা খাতুন, মাহমুদা খাতুন প্রমুখ ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অবদান রেখেছেন। স্কুলে কালো পতাকা তোলার জন্য স্কুলছাত্রী সালেহা বেগমকে জেলা প্রশাসকের আদেশক্রমে তিন বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়েছিল।
সিলেট ছিল আন্দোলনের উর্বর ক্ষেত্র। এখানে বিরোধিতাও ছিল প্রবল। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতারা ছিলেন উর্দুর পক্ষে। এসময় পরিষদের সদস্য ছিলেন আব্দুল হামিদ (শিক্ষামন্ত্রী), দেওয়ান তৈমুর রাজা (পার্লামেন্টারিয়ান সেক্রেটারী), দেওয়ান আবদুল বাসিত, দেওয়ান আবদুর রব চৌধুরী ও মঈনুদ্দিন চৌধুরী।
এছাড়া, আজমল আলী চৌধুরী নেতৃত্বাধীন এটিএম মাসুদ, মাওলানা রজিউর রহমান, বসু মিয়া, ময়না মিয়া, মদব্বির হোসেন চৌধুরী, শহীদ আলী, ডা. আবদুল মজিদ প্রমুখ নেতারাও নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে উর্দুকে সমর্থন করেন। পরিষদের সদস্যদের মধ্যে মাওলানা ইব্রাহিম চতুলী ও মাওলানা আবদুর রশীদ বাংলার পক্ষে হলেও প্রকোশ্যে সামনে আসতে পারেননি। ফলে সিলেটে প্রবল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই আন্দোলন চালাতে হয়েছে।
সিলেটের আলেমসমাজের একটি বিরাট অংশ ছিলেন বাংলার পক্ষে। এ সময় মুন্সীবাজার ইউনিয়নে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাধারণ সভায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে একটি প্রস্তাব গ্রহীত হয়। উল্লেখ্য, আলেম সমাজের অনেকে ছিলেন অখন্ড ভারতের পক্ষে। অর্থাৎ পাকিস্তানবিরোধী। তাই ওই সময় ভাষা আন্দোলনে তারা প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। কিন্তু বাংলার পক্ষে তাদের সমর্থন ছিল।
১৯৪৮ সালের ফেব্র“য়ারী মাসের মাঝামাঝি সিলেটের কয়েকজন বিশিষ্ট মহিলা পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পাঠান। এতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন মহিলা মসলিম লীগের জেলা কমিটির সভানেত্রী জুবেদা খাতুন চৌধুরী, সহ-সভানেত্রী সৈয়দা শাহার বানু, সম্পাদিকা সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন সিলেট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রমুখ।
১৯৫২ সালের ২২ ফেব্র“য়ারী ভোর থেকেই সারা দেশের মতো, সিলেট ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। সকাল থেকেই ছাত্র জনতা মিছিল করে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করতে থাকে। সকাল ১০টায় সিলেট রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সদস্যরা এক জরুরী সভায় মিলিত হয়ে পরবর্তী কর্মসূচী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সারা শহরের দেয়াল পোষ্টারে ছেয়ে যায়। স্কুল কলেজের ছাত্ররা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হয়।
সিলেটের মেয়েরাও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে রাজপথে নেমেছিল। সেই মিছিলের স্লোগান ছিল খুনের বদলা খুন চাই, নুরুল আমিনের ফাসি চাই-‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। গোবিন্দ পার্কের ভিতরের লাইট পোষ্টের নিচে গোল করে মেয়েরা বসে পরে। ছেলেরা দূরত্ব বজায় রেখে মেয়েদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন বাংলার বিরোধীরা নিরব। ভাষার সৈনিকরা নেমে পড়েন রাস্তায় জমজমাট হয়ে উঠে সিলেটের গোবিন্দ পার্ক। সভার পর সভা চলতে থাকে। বিকাল ৪টায় বার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী আব্দুল্লাহ বিএলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল সমাবেশ। সমাবেশ থেকে হত্যাকারীদের শাস্তি দাবী করে পরদিন আবার পূর্ণ দিবস হরতালের ঘোষনা দিয়ে সভা শেষ হয়।
সভার গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী সভা শেষে একটি প্রতিনধি দল স্থানীয় এমএলএ ও মুসলিমলীগ সরকারের পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী তৈমুর রাজা চৌধুরীর বাসভবনে গিয়ে তার পদত্যাগ দাবী করেন। সভা শেষে এক দীর্ঘ মিছিল রাত ৮টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। পরেরদিন শহর ও শহরতলীতে পালিত হয় পূর্ণ হরতাল। অফিস আদালত বন্ধ থাকে। হযরত শাহজালাল দরগাহ মসজিদে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
সিলেটে ২২থেকে ২৫ ফেব্র“য়ারী পর্যন্ত একটানা হরতাল, শোভাযাত্র ও সমাবেশ হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গোবিন্দ পার্কের ২২ ফেব্র“য়ারী মোঃ আব্দুল্লাহ’র সভাপতিত্বে, ২৩ ফেব্র“য়ারী মহিলা কলেজের অধ্যাপক আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে, ২৪ফেব্র“য়ারী মুক্তার দবিরুদ্দিন চৌধুরী সভাপতিত্বে ও ২৫ ফেব্র“য়ারী মনির উদ্দিন এডভোকেটের সভাপতিত্বে বিলাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ৫ মার্চ গোবিন্দ পার্কের সমাবেশটি ছিল সবচেয়ে বড়। এতে সভাপতিত্ব করেন আবু আহমদ, আব্দুল হাফিজ এডভোকেট (এম.এ মুহিতের পিতা)।
একুশের হত্যাযজ্ঞের পর সিলেটের অভুতপূর্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিদিন ২/৩টি মিছিল সমাবেশ হতে থাকে। সিলেটে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

Post a Comment

কমরেড আসাদ্দর আলী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম।তিনি সারাজীবন মেহনতী মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবিস্মরণীয় অবদান ছিল।তিনি কমিনিষ্ট আন্দোলনের পথিকৃত এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।গণ মানুষের নেতা কমরেড আসাদ্দর আলীর স্বরনে একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র।সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।