Feature Label 3

0


assador ali
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে ধন্যবাদ ১৮ অক্টোবরের সমকাল-এ প্রকাশিত তার লেখা 'ঠিকানা ২৬৩ বংশাল রোড_ চোখের আলোয়'-এর জন্য। এই লেখা আমার জন্য স্মৃতিজাগানিয়া এজন্য যে, ১৯৬৭ সালের জুন মাসে আমি ঢাকা যেতে বাধ্য হই (প্রয়াত) সহধর্মিণী আনিসা খাতুনের চাকরির সুবাদে। তিনি সিলেট সরকারি কলেজ হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ওই সালেই যোগ দেন সিনিয়র সুপারভাইজিং সিস্টারের পদে। সঙ্গে নিয়ে যান ৫ বছরের বড় ছেলে শাহীন ইবনে দিলওয়ার (মিলু) ও চার বছরের কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (রানা)কে।
স্ত্রীর জোরালো তাগিদে আমাকে ঢাকা যেতে হয়। মনে ছিল গোপন এক আনন্দ_ কাছে পাব কত কবি সাহিত্যিক শিল্পীকে, যেতে পারব সংবাদ-ইত্তেফাকসহ অন্যান্য পত্রপত্রিকা অফিসে।
স্মরণ করি, দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক ইত্তেফাক আমার সর্বাধিক কবিতা-ছড়া ইত্যাদি প্রকাশ করে। সংবাদের সৌজন্য ও সৌহার্দ্যে আমি প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণার লেখক-পাঠকদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠি। এই পরিচয়ের মধ্যে কোনো মলিনতা ছিল না। তাদের মধ্যে আছেন সত্যেন সেন, আবুল ফজল, রণেশ দাশগুপ্ত, সুফিয়া কামাল, আলতাফ মাহমুদ, শুভ রহমান, নাসিম আলী, রশীদ সিন্হা, অধ্যাপক আবদুল আলিম, রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী সন্জীদা খাতুন, মতিয়া চৌধুরী (তাকে একটি কবিতা উৎসর্গ করি_ 'অগি্নবোন মতিয়া চৌধুরী'কে), পীর হাবিবুর রহমান, কমরেড তারা মিয়া, কমরেড বরুণ রায়, সৈয়দ এহিয়া বখ্ত, কমরেড আসাদ্দর আলী, আহমদ নূরে আলম...। তারা তো ছিলেনই_ শহীদুল্লাহ কায়সার, বজলুর রহমান, সন্তোষগুপ্ত, এটিএম সামসুদ্দিন, মীর মাহবুব আলী, আখতার হুসেন, হাসান হাফিজুর রহমান ও ইমামুর রশীদ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার কবিতাকে যারা ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করেননি, তাদের কয়েকজনের নাম_ আবদুল কাদির, তালিম হোসেন, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, কবি মাহফুজ উল্লাহ, কবি আবদুস সাত্তার, কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক শাহেদ আলী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ...। 

দৈনিক সংবাদে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করি ১৯৬৭ সালের জুলাই অথবা আগস্টে। বেতন ১০০ টাকা। যাতায়াতের বাহন সদ্য চালু হওয়া সরকারি লালবাস। আজকের দমবন্ধকর মহাখালী এলাকা সেদিন ছিল জীবনের জীবন্ত মুক্তাঙ্গন।
আমাকে দেওয়া হয়েছিল সংবাদের মহিলা বিভাগের দায়িত্ব। এটি পরিচালনা করতেন মতিয়া চৌধুরী। তখন তিনি ছিলেন জেলে। বলতে পারব না, সংবাদের সর্বাধিক কর্মী কেন আমাকে প্রীতির নজরে দেখতেন। প্রেস সেকশনের কর্মীদের হৃদ্যতার কথা আজীবন মনে থাকবে। কী করে ভুলতে পারি একটেবিলে বসে কাজ করেছি রণেশদা, সত্যেনদা ও আমি?
একটি ঘটনা খুবই অর্থবহ! রণেশদা ও আমি টেবিলে মুখোমুখি বসে কাজ করছি। এমন সময় এক ভদ্রলোক এসে রণেশদার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বাক্যালাপ সেরে একটি লেখা দাদার হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আমাকে ডাকলেন এবং লেখাটি এগিয়ে দিয়ে নির্মল হাসি ছড়িয়ে বললেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এটি লিখেছেন। আপনি পড়ে দেখুন, ছাপা হবে কি-না।'
লেখাটির নাম, যতদূর মনে পড়ে_ 'রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে হিন্দুধর্ম ও মুসলমান'।
আমি আদ্যোপান্ত পড়লাম কিছু আন্ডার লাইনের আশ্রয় নিয়ে। লেখক খুব গুরুত্ব সহকারে বোঝাতে চেয়েছেন, কলতলায় জল আনতে গেলে যদি কোনো মুসলমান কলের পাশ দিয়ে যায়, তাহলে ভরা কলস খালি করে আবার সেটা পূর্ণ করতে হয় পবিত্রতা রক্ষার জন্য। রবীন্দ্রনাথ হিন্দু হয়েও হিন্দুধর্মের ক্ষুদ্র মানসিকতা দেখাতে কুণ্ঠিত হননি ইত্যাদি।
রণেশদা জানতে চাইলেন, কেন আন্ডার লাইন করেছি।
জবাবে বললাম, দাগানো লাইনগুলো বাদ দিতে হবে। কট্টরপন্থিরা রবীন্দ্রনাথকে অপব্যবহার করবে।
আমার কথা রাখা হয়েছিল।
ওদিকে হাসপাতালের কোয়ার্টারে স্বতঃস্ফূর্ত একটি সাহিত্যচক্র গড়ে ওঠে। সেদিন যাদের আপন করে পেয়েছিলাম তারা হলেন_ ডা. হাদী দাউদী, ম্যাট্রন হালিমা দাউদী, লতিফুর রহমান মাহমুদ, কাজী সালাহ উদ্দিন, দাউদ হায়দার, সানাউল হক খান, মাকিদ হায়দার, আবুল হাসান, নির্মলেন্দু গুণ, আবুল ফজল, স্বপ্না রহমান_
হঠাৎ বুকের ভেতরটা জ্বালা করে ওঠে।
চিৎকার করে বলতে চায় মন_ হে প্রিয় স্বাধীনতা, আমার প্রিয়জনদের অতীত ফিরিয়ে দাও।
অতীতকে ফিরে পাওয়া যায় না।
অসম্ভব।
অসম্ভবকে পাওয়ার জন্যই বৈজ্ঞানিক মনীষার সাধনা।
ক্যামন আছেন মালেকা বেগম, নীনা হোসেইন, বেবী মওদুদ? একতা-র মতিউর রহমান?
স্মৃতির জগতে কুয়াশা নেমেছে। নামুক।
আমি অস্বীকার করি টিএস এলিয়টের উচ্চারণ_ হিউম্যান কাইন্ড ক্যান নট বিয়ার ভেরি মাচ রিয়ালিটি!
পৃথিবীর সব দরিদ্র দেশ নিষ্ঠুর, নির্মম বাস্তবতা নিয়ে বেঁচে আছে।
শ্রদ্ধেয় দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাই।
সংবাদ-এ প্রকাশিত 'একদিন হিটলারও ভাবতেন' কবিতাটি আবৃত্তির ক্যাসেটে তুলে রাখার জন্য।

-দিলওয়ার : কবি

Post a Comment

কমরেড আসাদ্দর আলী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম।তিনি সারাজীবন মেহনতী মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবিস্মরণীয় অবদান ছিল।তিনি কমিনিষ্ট আন্দোলনের পথিকৃত এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।গণ মানুষের নেতা কমরেড আসাদ্দর আলীর স্বরনে একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র।সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।