১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস ২১ ফেব্র“য়ারীকে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করার পর থেকে দিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষ এ-দিনটিকে যার-যার মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছেন। হোক ভাষাটি বাংলা-সিলেটী গুজরাটি, হিন্দি, ইংরেজী কিংবা আরবী। আমাদের জন্যে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যময় কেননা আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। আর এই বাংলাভাষাকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কত প্রাণের আত্যাহুতি দিতে হয়েছে।
রাষ্ট্রভাষা আর মার্তৃভাষা একজিনিষ নয়।
ভাষা বিজ্ঞানীরা এভাবেই এর সজ্ঞা দিয়েছেন মানুষ জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে
শুনে যে ভাষায় কথা বলতে শেখে তার নাম মাতৃভাষা। রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার
জন্যে সকলের বোধগম্য এবং দেশের সংখ্যাগরিস্ট জনসংখ্যার ব্যবহৃত ভাষাকে
সকলের মতামতের উপর গুরুত্ব প্রদান করে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে
শিক্ষা,অফিস-আদালত সহ রাষ্ট্রীয় কাজে যে ভাষার প্রচলন করা হয় তার নাম
রাষ্ট্র ভাষা। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই একাধিক ভাষার প্রচলন রয়েছে । যেমন
ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি, আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা, গ্রেটব্রিটেনে
ইংরেজী এবং ওয়েলস।
সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হলো
মাতৃভাষার কোন বিকল্প নেই । পৃথিবীর যে কোন ভাষাকে আয়ত্ব করতে হলে
সর্বপ্রথম প্রয়োজন মাতৃভাষার। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষার বিকল্প নেই।
২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত আমরা বাঙ্গালীরা এ দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে
পালন করে আসছি। ভাষার জন্যে বাঙ্গালী ছাড়া আর কোন জাতি রক্ত দিয়েছে বলে
আমার জানা নেই। তাই বিশ্ববাঙ্গালীর কাছে এ দিবসটির গুরুত্ব অসীম। কেননা
ভাষার জন্যে বাঙ্গালীর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার
প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১
ফেব্র“য়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এর পর থেকে
বিশ্বব্যাপী দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর
সিলেটের সর্বত্র গ্রামে-গঞ্জে রাস্ট্র ভাষা বাংলার পক্ষে মিছিল মিটিং
অব্যাহত থাকে। প্রতিটিতি সভা-সমাবেশের সংবাদ আল-ইসলাহ পত্রিকায় ছাপা হয়। যা
এখনও মুসলিম সাহিত্য সংসদে রক্ষিত রয়েছে। এই আন্দোলনে সে সময়কার রাজনৈতিক
এবং ছাত্র নেতাদের যাদের প্রশংসনীয় ভ‚মিকা রয়েছে তাদের অনেকেই আজ আর ইহজগতে
নেই। উল্লেখ যোগ্যরা হলেন তাদের মধ্যে সাহিত্যিক মতিন উদ্দিন আহমদ, ডঃ
সৈযদ মুজতবা আলী, মৌলানা ইব্রাহিম চতুলী, মৌলানা শাখাওয়াতুল আম্বিয়া, সাবেক
পররাস্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী,
কমরেড আসাদ্দর আলী, পীর হবিবুর রহমান, এ এইচ সা-আদাত খান, বেগম জোবেদা রহিম
চৌধুরী, সৈয়দা সাহেরা ভানু, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, মাহবুব আলী, আব্দুল
হাই (সুনামগঞ্জ) দেওয়ান মুজিবুর রহমান চৌধুরী, রফিকুল হক চৌধুরী, আব্দুল
বারী চৌধুরী আবুল মাল আব্দুল মোহিত, বেগম হাজেরা মাহমুদ, দেওয়ান ওহিদুর
রেজা, প্রমুখের নাম উল্লেখ যোগ্য।
অন্যদিকে ঢাকাতে ১৯৫১ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারী
ডঃ শহিদ উল্লা, ইব্রাহিম খা সহ দেশের বুদ্দিজীবিরা পাকিস্তানের প্রধান
মন্ত্রীর কাছে স্মারক লিপি প্রদান করেন। ১৯৫১ সালের ১৬ থেকে ১৯ মার্চ
চট্রগ্রামে পূর্বপাকিস্থান সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলনে
রাস্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে দাবী তোলা হয়। ১৯৫১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার পলটন
ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। ৭ ফেব্রƒয়ারী গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম
পরিষদ। সরকারীভাবে ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ এবং বাস্তব ইতিহাস রচনার
উদ্যোগ নেয়া হউক। যারা ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তাদের অনেকেই আজ নেই।
Post a Comment
0 comments
কমরেড আসাদ্দর আলী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম।তিনি সারাজীবন মেহনতী মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবিস্মরণীয় অবদান ছিল।তিনি কমিনিষ্ট আন্দোলনের পথিকৃত এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।গণ মানুষের নেতা কমরেড আসাদ্দর আলীর স্বরনে একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র।সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।