Feature Label 3

0

comrade assador ali
জননেতা আসাদ্দর আলী ছিলেন একজন ব্যতিক্রমি রাজনীতিবিদ। তিনি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তার সারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ছিলেন নির্লোভ, ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ। পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ ছিলো অপরিসীম। এই আগ্রহ এক সময় তার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো।
গভীর অভিনিবেশ সহকারে তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেকে একজন তাত্ত্বিক হিসেবে গড়ে তুলেন। তার এ প্রচেষ্টার ফলে আমাদের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ভুবন সমৃদ্ধ হয়েছিলো। আমাদের সমাজে এ রকম ব্যতিক্রমি রাজনীতিবিদের সংখ্যা একান্তই বিরল।
এসব ক্ষণ-জন্মা পুরুষরা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছেন। হারিয়ে গেছেন পীর হবিবুর রহমান, আব্দুল হামিদ, তারা মিয়া তো আসাদ্দর ভাই’র আগে বিদায় নিয়েছেন। দুরারোগ্য কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে আসাদ্দর আলী মাত্র ৬৫ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি এমন এক সময় বিদায় নিলেন যখন তার মতো ও নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদের প্রয়োজন খুব বেশি করে অনুভূত হচ্ছে।
জননেতা আসাদ্দর আলীর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাত ও পরিচয় সম্ভবত ১৯৫৫ সালে। এসময় আমার কর্মস্থল সুনামগঞ্জ অঞ্চলে। মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কারণেই সিলেটে আসতে হতো। তখন মাহমুদ আলী সাহেবের  ‘নওবেলাল’ পত্রিকার অফিস ছিলো জিন্দাবাজারে এক নড়বড়ে দু’তলা ঘরে। পীর হবিবুর রহমান, তারা মিয়ার ঠিকানা ছিলো এই নওবেলাল অফিস। প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যোগাযোগের কেন্দ্র এটা। পীর সাহেবদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সেদিন আমি জিন্দাবাজারে নওবেলাল অফিসে হাজির। আমার সৌভাগ্য, সেখানে আমি এক সঙ্গে সাক্ষাৎ পাই তিনজন জাদরেল রাজনীতিবিদদের। তারা হলেন পীর হবিবুর রহমান, তারা মিয়া ও আসাদ্দর আলী। পীর সাহেব ও তার ভাই’র সঙ্গে আগের পরিচয় ছিল। কিন্তু আসাদ্দর আলীকে এই প্রথম দেখলাম। তারা ভাই আমাদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেন। আমরা কিছু সময় নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করি। আমরা সবাই তখন প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ করি। কিন্তু আমাদের মূল ছিল কমিউনিস্ট পার্টি।
সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আই.এ পাশ করার পর ১৯৬২ সালে আমি সিলেটে চলে আসি। আসাদ্দর ভাই’র আবাসস্থল তখন নাইওরপুলে। বর্তমানে এই বাসায় তার ভাগ্নে প্রয়াত হেড মাস্টার আব্দুর রহমানের পরিবার বসবাস করছেন। বাসার সম্মুখে ছোট একটা ঘর আছে। আসাদ্দর ভাই এই ঘরেই বসতেন। সব সময় কর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো ঘরখানি। সাইনবোর্ড না ঝুললেও এটা ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপের অফিস হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। মফস্বলের কর্মীরাও যোগাযোগের জন্য এখানেই আসতেন। আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিলো মনিরউদ্দিন আহমদ এডভোকেটের (পিপিসাব) বাসায়। বাসাটি ছিল বারুতখায়। কাজ-কর্মের মধ্য দিয়ে ক্রমে ক্রমে আসাদ্দর ভাই’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। সিলেটের বা মফস্বলের যে সকল কর্মীর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিলো না আসাদ্দর ভাই’র মাধ্যমে তার বাসায় প্রায় সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, পরিচয় হয়। আসাদ্দর ভাই বিভিন্ন ফোরামে আমাদের নিয়ে বসতেন। পার্টির ছাত্র কর্মীদের নিয়ে বসতেন, গ্রুপ সভা করতেন। চলমান রাজনীতি, পার্টির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করতেন। পার্টি লিটারেচারের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতেন। কঠিন বিষয়বস্তু সহজ ভাষায় বুঝাবার চেষ্টা করতেন।
১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের সময় আমরা সিলেটে ডিফেন্স কমিটি গঠন করেছিলাম। সকল ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে ডিফেন্স কমিটি গঠিত হয়েছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে ছাত্র ইউনিয়ন (ইপ্সু) ও প্রগতিশীল শক্তি যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং যুদ্ধবন্ধের দাবী জানিয়ে ছিল। ডিফেন্স কমিটিতে অনুরুপ বক্তব্য ছিল আমাদের। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রতিনিধি মুসলিম লীগ নেতা দেওয়ান আব্দুল বাসিত, আজমল আলী চৌধুরী প্রমুখের দাবি ছিল ভারতকে পরান্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যহত থাক। তারা শিলং দখল করে নেবার ঘোষনা দিয়েছিল। আমাদের যুদ্ধ বিরোধী বক্তব্য এবং যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি তোলায় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষেপে যায়। তারা আমাদের ভারতের চর ও দালাল বলে আখ্যা দিয়ে চারজনকে ডিফেন্স কমিটি থেকে বের করে দেয়। শুধু তাই নয়, বাড়াবাড়ি করলে আমাদের গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। যে চার জনকে ডিফেন্স কমিটি থেকে বের করে দেয়া হয় তাদের অন্যতম ছিলেন তৎকালের ন্যাপ নেতা আসাদ্দর আলী, অন্য তিনজন হলেন, ন্যাপ নেতা ও বিডি মেম্বার কুঞ্জেস্বর সিংহ, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা নন্দগোপাল চৌধুরী এবং আমি। দেওয়ান বাসিত ও আজমল আলী গোষ্ঠী আমাদের উপর এতটাই ক্ষেপে গিয়ে ছিল যে, সপ্তাহদিন আমাদের আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
দেশ-মাটি ও মানুষকে নিয়ে আসাদ্দর ভাই নিরন্তর ভাবতেন। বিচিত্র মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তিনি রাজনীতি করতেন। প্রকাশ্য সভা সমিতি এবং পার্টির আন্ডার গ্রাউন্ড কর্মসূচিতে আসাদ্দর ভাই’র সঙ্গে একসাথে কাজ করেছি। দীঘদিনের তাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমার উপলব্ধি ঃ আসাদ্দর ভাই কমিউনিস্ট রাজনীতি, দেশপ্রেম ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তার মতো ত্যাগী, নিরহঙ্কার ও নির্লোভ রাজনীতিবিদ বেশি দেখা যায় না। আমাদের রাজনীতিতে এ রকম জনদরদী ও দেশহিতৈষী নেতৃত্বের খুবই অভাব। এসব কারণেই রাজনীতিতে দুর্বৃত্তপরায়নতা আসর জেঁকে বসার সুযোগ পেয়েছে। রাজনীতে সুন্থতা, দেশপ্রেম, ত্যাগী মনোভাব, সততা ও ন্যায় নিষ্ঠা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আসাদ্দর ভাই’র মতো মানুষের প্রয়োজন ক্রমেই বেশি বেশি অনুভূত হচ্ছে।

গুলজার আহমদ : রাজনীতিবিদ।

Post a Comment

কমরেড আসাদ্দর আলী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম।তিনি সারাজীবন মেহনতী মানুষের কল্যানে কাজ করে গেছেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবিস্মরণীয় অবদান ছিল।তিনি কমিনিষ্ট আন্দোলনের পথিকৃত এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।গণ মানুষের নেতা কমরেড আসাদ্দর আলীর স্বরনে একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র।সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।